একজন বাউল সাধক রনেশ দাস ঠাকুর ও আমাদের দায়! বাংলা টাইমস বাংলা টাইমস বার্তা ডেস্ক প্রকাশিত: ৪:০১ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২০ আবদুল রহমান : আধ্যাত্ববাদী চেতনায় দেহের আবরনে আত্বার সন্ধানে প্রাতিষ্ঠানিক সকল ধর্মে মরমীবাদের সূচনা হয়।মরমীবাদের হৃদয়স্পর্ষী শব্দমালায় রচিত সঙ্গীত বাউল সঙ্গীত নামে পরিচিত যা কিনা গানের সাধনায় আধ্যাত্ববাদী চেতনায় একদল সত্য- সাধক,ভবঘুরে, সহজ-সরল, মানবতাবাদী শ্রেনীর জন্ম হয়। যাদেরব আমরা বাউল বলে থাকি। বাউল রনেশ দাস ঠাকুর তেমনই একজন সাধক,নির্বিরোধ বাউল যিনি গানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্কের মানবীয় প্রেম,অহিংসা,ধর্মীয় সংস্কার ও সংকীর্নতার উর্ধে অাত্বার মুক্তির কথা বলেন। গুরু শিষ্যের পরম্পরায় তাদের ভাববাদী দর্শন প্রচার করেন বিদ্যমান সমাজের ব্যক্তিমানুষর নানা লোভ,হিংসা,হঠকারীতা,জাগতিক মোহ- মায়ার বিরুদ্ধে। সুনামগন্জের বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের শিষ্য বাউল রনেশ দাস ঠাকুর দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে লোকসংগীতের এ ধারায় নিয়োজিত আছেন।গড়ে তুলেছেন নিজস্ব গানের দল,সংগ্রহ করেছেন নানা বাদ্যযন্ত্র ও গানের উপকরন, সাধনায় গানের খাতা ও বই। নির্মান করেছিলেন একটি গানের ঘর যেখানে গানের অাসর বসত। কিন্তু গত রবিবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বাউলের দোতারা, হারমোনিয়াম, গানের খাতা,বই, যন্ত্রপাতিসহ গানের ঘরটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।বাউলের চোখের সামনে তার চিরচেনা জগত, সাধনার গানের ঘর,শখের উপকরন নিমিষেই অবলুপ্ত হয়ে যায়। যতবারই ভেবেছি বাউল রনেশ দাসের ক্রন্দনরত – হা হুতাশ করা মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। একজন শিল্পীর উপর অাঘাত সংস্কৃতির উপর অাঘাতেরই নামান্তর। বাংলায় সংস্কৃতির উপর আক্রমন নতুন নয়! ইতিপূর্বেও আমরা দেখেছি মরমীসাধক বাউল লালন সাইয়ের দেহাবসানের পর যে ঘরটিতে তাকে সমাহিত করা হয়, সেই সাধন- সঙ্গের হকের ঘর নিয়েও প্রভাবশালী মহলের নানা চক্রান্ত ছিল। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার ডিসিসহ স্থানীয় লোকজন লালনের অনুসারীদের কাছ থেকে হকের ঘর নেয়। বাউলদের মারধর করে তাদের চুল কেটে দেওয়া হয়। এসব সহজ সরল বাউলদের মারধর- চুল কেটে তারা কোন ধর্ম উদ্ধার করেছিলেন তা অামার বোধগম্য নয়।লালনের জীবদ্দশা থেকেই বাউলরা সমাজে নির্যাতিত ও অবহেলিত। যার ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান। বাউল রনেশ দাস ঠাকুরের গানের ঘর পোড়ানোর ঘটনায় অামরা বুঝতে পারি একদল প্রতিক্রিয়াশীল শিল্প- সংস্কৃতির উপর আঘাত করে, ভিন্নমতের চর্চা অবরুদ্ধ করে সভ্যতার চাকা পেছনে ঘোরাতে চান।কিন্তু সভ্যতার চাকা পেছনে ঘোরেনা। শিল্প- সংস্কৃতির ধারক- বাহকরা সভ্যতার চাকা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। আদিম মানুষের বর্বর ও যাযাবর জীবনব্যবস্থা থেকে গোষ্ঠীবদ্ধ ও সমাজবদ্ধ জীবনব্যবস্থায়য় ক্রমে ক্রমে সভ্যতার বিকাশ লাভ করেছে।কালের পরিক্রমায় ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা সভ্যতার উত্তরন ঘটে। রনেশ দাস ঠাকুর ক্লাইভ বেল তার সিভিলাইজ্যাশন গ্রন্থে বলেছেন……সভ্যতা সৃষ্টি করে মানুষ।সুন্দরচিত্ত মানুষ দ্বারাই সভ্যতা বিকশিত ও প্রভাবিত হয়। যে যুগে যত বেশি আলোক ও মাধুর্যের সাধনা হয়, সে যুগ তত বেশি সভ্য। তাই রনেশ দাস ঠাকুরের মত শিল্পীদের শিল্পের সাধনার পথ সুগম করা প্রয়োজন। কিন্তু তাদের উপর আক্রমন আমাদের সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে! অামাদের নতুন করে ভাবতে হয়, আমাদের জ্ঞান- বিজ্ঞানের সামাজিক বাস্তবতাটা কি? ভিন্নমতের প্রতি আমরা কতটুকু শ্রদ্ধাশীল? ভিন্নমত- ভিন্ন সংস্কৃতি কি আমরা সাদরে গ্রহন করি? আলোচনা- সমালোচনার মাধ্যমে যুক্তি দিয়ে বিচার করে নতুন আলোক খুজি? নাকি নিজেদের বিশ্বাসের আলোকে ভিন্নমতকে – ভিন্নসংস্কৃতিকে ধংব্স করি? হত্যা করি! তাকে অবদমিত করার চেষ্টা করি। সেটাই কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ভিন্নধর্ম- সংস্কৃতির সমন্বয়ে একাত্তরে বাংলার শিল্পীরা গেয়েছিল, বাংলার হিন্দু,বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান,বাংলার মুসলমান অামরা সবাই বাঙালি সেই চেতনার পুনর্গঠনে শিক্ষা- সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে ভিন্নমত-ভিন্ন সংস্কৃতির সুস্থ চর্চার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য। রাষ্ট্রের উচিত দৃষ্টান্ত রাখা যাতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, সংস্কৃতিগোষ্ঠীদের বাউল রনেশ দাস ঠাকুরের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। দীর্ঘ ৪০ বছরের সাধনা, গানের ঘর পুনর্নিমান, বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহে সরকারের ভুমিকা রাখা উচিত নতুবা প্রতিক্রিয়াশীলরা পুনরায় উৎসাহিত হবে। শিল্প- সংস্কৃতির উপর আক্রমন চলতেই থাকবে আর একেকজন বাউল রনেশ দাস ঠাকুর চাপা ক্ষোভে গানের ভাষায় বলে যাবে, তোরা আমার ঘর পোড়াবি বই পোড়াবি দোতরাটার পুড়বে তার কেমন করে সুর পোড়াবি গান ভোলাবি প্রেম সাধনা জীবন যার তাই আমাদের উচিত জ্ঞান- বিজ্ঞান,শিল্প- সাহিত্যের চর্চায় নিজেদের সমৃদ্ধ করে সমাজ রুপান্তরে সহায়ক হওয়া। আমাদের পৃথীবিটা যেমন বহু ধর্ম- বর্ন-জাতি- গোষ্ঠীর সংমিশ্রনে তৈরি হয়েছে।তেমনি আমাদের দেশটাও বহু ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় ও বিশ্বাসের মানুষদের সমন্বয়েই এগিয়ে চলছে।সব মানুষ যেমন একরকম হয়না,হতে পারেনা; তেমনি সবার বিশ্বাস ও মতাদর্শও একরকম হয়না।এই বৈচিত্র্যের কারনেই পৃথীবি এত সুন্দর।মানুষ এত সুন্দর।এখানেই মানুষের বেচে থাকার অনুপ্রেরনা। SHARES আরও পড়ুন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সর্বস্তরের জনগণকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা- মাহী বি চৌধুরী শ্রীনগর বাসীকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা- আব্দুল্লাহ আল-মামুন